Economy

আইএমএফ, বাজেট সংকট ও অর্থনীতির রূপরেখা: কোথায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ?

লিখেছেন: মাহবুব ওসমান নিউজ ডেস্ক | ০৫ মে ২০২৫

বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ঘিরে বর্তমানে যে অস্থিরতা চলছে, তা কোনও আকস্মিক দুর্ঘটনা নয়, বরং দীর্ঘদিনের আর্থিক অব্যবস্থাপনা, রাজনৈতিক ডোনেশন সংস্কৃতি ও বিদেশি ঋণের প্রতি অতিনির্ভরশীলতার ফল। বর্তমান সরকার তথা ইউনূস সরকার ২০২৪ সালে ক্ষমতায় এসে এক ভঙ্গুর অর্থনীতি পেয়েছে, যা শুধুমাত্র চোখে দেখা আইনশৃঙ্খলার চেয়েও ভয়াবহ।

লোটাস কামাল ও অর্থনৈতিক ভাঙনের শুরু

সাবেক অর্থমন্ত্রী লোটাস কামালের আমলেই বাংলাদেশের অর্থনীতি ধ্বংসের পথে হাঁটতে শুরু করে। ব্যক্তিগত বিনিয়োগের বিনিময়ে অর্থমন্ত্রীর চেয়ারে বসা এই ব্যক্তি নিজের শপথ গ্রহণের মাত্র ২০ দিনের মাথায় একটি সম্পূর্ণ ব্যাংক—সাবেক ফার্মার্স ব্যাংক—গিলে ফেলেন এবং এর নাম পাল্টে ‘পদ্মা ব্যাংক’ রাখেন। তার কন্যাকে ওই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে বসিয়ে নিজের গোষ্ঠীর আর্থিক স্বার্থ সংরক্ষণের পথ সুগম করেন।

এরপর পদ্মা ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খুলে দেনা করেন, যেগুলো শোধ হয় সাধারণ জনগণের আমানত দিয়ে—কৃষক, শিক্ষকের পেনশন, নারী উদ্যোক্তাদের সঞ্চয় দিয়ে। ব্যাংকের সংকটে সরকারের সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস টাকা ছাপিয়ে বেইল আউট দেয়, যার ফলশ্রুতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

আইএমএফ ঋণ ও রাজনৈতিক পট পরিবর্তন

২০২২ সালের পর থেকেই বাংলাদেশ আইএমএফের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী চলতে বাধ্য হয়। ফলশ্রুতিতে বাড়ানো হয় জ্বালানি ও বিদ্যুৎ এর দাম, মুদ্রানীতি শিথিল করে ডলারের ক্রলিং পেগ চালু করা হয়, বন্ধ করা হয় ভর্তুকি। এতে শুধু জনজীবন বিপর্যস্ত হয়নি, প্রশাসনিক স্তরেও অসন্তোষ বাড়ে। একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লোটাস কামালের উপর ক্ষুব্ধ হন, যা ২০২৪ সালে মন্ত্রিপরিষদে বড় রদবদলের কারণ ব্যক্তিগত বিনিয়োগের বিনিময়ে অর্থমন্ত্রীর চেয়ারে বসা এই ব্যক্তি নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও আর্থিক খাতকে ব্যবহার করেন নির্দ্বিধায়। দায়িত্ব গ্রহণের ২০ দিনের মাথায় তিনি ফার্মার্স ব্যাংককে ‘পদ্মা ব্যাংক’ নামে রিব্র্যান্ড করে সেটি কার্যত নিজের কর্পোরেট স্বার্থে ব্যবহার শুরু করেন। তাঁর মেয়েকে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিযুক্ত করা হয় এবং নিজের গ্রুপের সকল এলসি পদ্মা ব্যাংকের মাধ্যমে পরিচালনা করতে শুরু করেন।

এর ফলে ব্যাংকটি ভয়াবহ দেনার ভারে জর্জরিত হয়ে পড়ে। গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে না পারায় সরকার সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস থেকে টাকা ছাপিয়ে ব্যাংকটিকে বেইলআউট করে। এর পরিণতি পড়ে সাধারণ মানুষের জীবনে—ব্যাংক থেকে টাকা না পেয়ে তারা চরম ভোগান্তির শিকার হন এবং সেই টাকার ভার গিয়ে পড়ে জনগণের ঘাড়ে মুদ্রাস্ফীতির মাধ্যমে।

আইএমএফের ঋণ ও সংকটের দ্বিতীয় ধাপ

লোটাস কামাল ও তার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে দেশীয় অর্থনীতি যখন ধ্বংসের মুখে, তখন বাধ্য হয়েই সরকার আইএমএফ-এর দ্বারস্থ হয়। আইএমএফ প্রথম তিন কিস্তিতে মোট ২.৩১ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিলেও, বাকি ২.৩৯ বিলিয়ন ডলারের জন্য এখনও তীব্র আলোচনা চলছে। IMF-এর মূল দাবি—টাকার মূল্য বাজারের হাতে ছেড়ে দিতে হবে, যা করলে ডলার এক ধাক্কায় ১২১ থেকে ১৩৫ টাকায় পৌঁছাতে পারে। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি ও গণআন্দোলনের আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এই শর্ত মানতে রাজি নন। তিনি চান, অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনাতেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হোক, বিদেশি ঋণ গ্রহণে যতটা সম্ভব কৌশলী থাকা হোক।

ইউনূস সরকারের উদ্যোগ ও সীমাবদ্ধতা

বর্তমান সরকার আইএমএফের চাপ সামাল দিতে তিনটি কৌশল নিয়েছে—

  1. রেমিটেন্সে জোর: প্রবাসীদের উৎসাহ দিয়ে প্রায় ৩০% বেশি রেমিটেন্স আদায় করা হয়েছে।
  2. বড় দুর্নীতিতে রাশ টানা: গত এক বছরে কোনো হাজার কোটির দুর্নীতির ঘটনা ঘটেনি।
  3. মেগাপ্রকল্প বন্ধ: ব্যালেন্স অব পেমেন্ট ও রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে মেগা প্রকল্পে খরচ কমানো হয়েছে।

তবে মেগাপ্রকল্প বন্ধের ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে চাপ দেখা দিচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো টাকার অভাবে কর্মী ছাঁটাই করছে। বেকারত্ব বাড়ছে। ফলে অভ্যন্তরীণ চাহিদাও সংকুচিত হচ্ছে।

আগামী বাজেট ও রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের আকার ধরা হয়েছে প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকা। আইএমএফ এর চাপে সরকারকে ৪০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব তুলতে হবে। ট্যাক্স-টু-জিডিপি রেশিও বর্তমানে মাত্র ৮% যা দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম। একে বাড়ানো ছাড়া রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য পূরণ অসম্ভব। কিন্তু ভ্যাট বা ইনকাম ট্যাক্সের ক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ অবস্থায় বাজেট ঘাটতি স্পষ্ট হয়ে উঠবে এবং এর রাজনীতিক প্রভাবও হবে সুদূরপ্রসারী।

উপসংহার

২০২৪ সালের পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় ব্যবসায়ী-নির্ভর ক্যাবিনেটের জায়গায় কিছু যোগ্য ব্যক্তি এলেও দেশের অর্থনীতির কাঠামোগত দুর্বলতা সহজে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। আইএমএফের চূড়ান্ত কিস্তি, টাকার মূল্য, রেমিটেন্স প্রবাহ ও অভ্যন্তরীণ চাহিদা—সব কিছু মিলিয়ে সরকার এক কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি। সামনে বাজেট কী বার্তা দেয়, সেটিই বলে দেবে—অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, নাকি আরও এক সংকটের দিকে এগোচ্ছে বাংলাদেশ।


সূত্র: তন্ময় সরকার উজ্জ্বল, সংগৃহীত ও বিশ্লেষণাত্মক তথ্য
প্রকাশিত: news.mahbubosmane.com

Increase Your Business with Expert Digital Solutions!

Get Unlimited Facebook Ad Credit, Guaranteed SEO Rankings, & Professional Web Development – all under one roof at MahbubOsmane.com!

✅ 14+ Years of Experience – Guaranteed SEO Rankings
✅ 800+ Satisfied Clients – Unlimited Facebook Ad Credit
✅ Proven Results, Maximum ROI – Professional Web Development

Contact us ( +8801716988953 WhatsApp ) today and take your business to the next level! 🌍 Visit: MahbubOsmane.com

Do you still have questions? Or would you like us to give you a call?

Call us at wa.me/+966549485900 or wa.me/+8801716988953 to get a free consultancy from our expert or you can directly email us at hi@mahbubosmane.com We would be happy to answer you.

MahbubOsmane.com’s Exclusive Services

Digital Marketing
SEO & SMM
Content Creation
Web Development
Google Ads & Meta Ads
Graphic Design
Affiliate Website
Brand Promotion
Marketing Plan & Consulting
Other Services
Our Courses
Domain Hosting

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button